২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার, বিকাল ৫:২১
শিরোনাম :
শিরোনাম :
অমর একুশে বইমেলায় মনোয়ার মোকাররমের “আগামী বসন্তে” আজ বঙ্গবন্ধু গবেষক মিল্টন বিশ্বাসের জন্মদিন কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় এপার-ওপার বাংলার লেখকগণ জবিতে ‘মধুসূদন ও বাংলা সাহিত্য’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত দীনেশচন্দ্র সেনের বৃহৎবঙ্গ, বাংলার লোককৃষ্টির যুক্ত সাধনার ঐতিহ্য আলোচনা সভার প্রধান আলোচক মিল্টন বিশ্বাস স্বর্ণপদক পাচ্ছেন কথাসাহিত্যিক নাসরীন জেবিন যারা কবিতা ভালোবাসে তারা স্বচ্ছ মানসিকতার হয় : কবি কামাল চৌধুরী ফাঁসিতলা ক্লাব ও পাঠাগারের কার্যনির্বাহী কমিটির সাথে সাংসদ মনোয়ার হোসেন চৌধুরীর শুভেচ্ছা বিনিময় ফাঁসিতলা ক্লাব ও পাঠাগারের প্রথম কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত ‘‘সাহিত্যে দুই মহামানব : গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু’’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক আলোচনা চক্রটি অনুষ্ঠিত
নোটিশ :
Wellcome to our website...

পেঁয়াজ সমাচার

মোঃ আব্দুল বাকী চৌধুরী নবাব
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২১ অপরাহ্ন

এক) এই তো চলতি ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের প্রথম থেকে শুরু করে অক্টোবরের প্রায় মাঝামাঝি পর্যন্ত পেঁয়াজের মূল্য সীমাহীন বৃদ্ধি পাওয়ায় জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। অবশ্য এখন পেঁয়াজের মূল্য নিম্নগামী হলেও যতখানি কমার কথা, অতখানি হচ্ছে না। তাই ভাবলাম, বর্তমান প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয় তুলে ধরে স্বল্প পরিসরে একটি আর্টিকেল লিখবো। বর্তমানে যে পেঁয়াজের মূল্য নিয়ে সুনামি চলছে, সে কথা না হয় পড়ে বলি। আসলে পেঁয়াজকে মসলা জাতীয় দ্রব্য মনে করা হলেও বস্তুত এটি শাকসবজির আওতাভুক্ত। এদিকে দেশ ও ভাষা ভেদে পেঁয়াজের নানা নাম রয়েছে, যেমন- বাংলায় পেঁয়াজ, আরবিতে বছল, ফারসিতে প্যাজ, সংস্কৃতিতে যবনেষ্ট এবং ইংরেজীতে ওনিয়ন , ইত্যাদি। তাছাড়া বোটানিক্যাল এবং বৈজ্ঞানিক নাম যথাক্রমেAllium Cepa Linn এবং Allium Cepa এটি স্বাদে গন্ধে তেজস্বি ও উগ্রগন্ধ বিশিষ্ট। তবে এর মধ্যে যথেষ্ট পুষ্টিগুণ রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে নমুনা হিসেবে ১০০ গ্রাম পেঁয়াজের উপর ভিত্তি করে একটি উদহারণের সাহায্য নিচ্ছি। এ সূত্র ধরে ১০০ গ্রামের মধ্যে শতাংশ হিসেবে জলীয় পদার্থ ৮৬.০ গ্রাম। তাছাড়া রয়েছে ১.২ গ্রাম প্রোটিন, ৯.৩৪ গ্রাম শর্করা এবং ০.১৮ গ্রাম ক্যালসিয়াম। এদিকে এতে আছে লৌহ, ফসফরাস ও অন্যান্য পদার্থ যথাক্রমে ০.৭ গ্রাম, ০.৪০ গ্রাম ও ২.১৮ গ্রাম। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, পেঁয়াজের ঔষধিগুণও কম নয়? এ সূত্র ধরে বলতে দ্বিধা নেই যে ছত্রাক আক্রমনে মাথার মাঝখানে চুল উঠে গেলে, এর রস ব্যবহারে পুনরায় চুল গজাতে সাহায্য করে থাকে। এদিকে ক্ষুধা ও রুচিবর্দ্ধক এবং এর উদ্ধায়ু তেলে রয়েছে উত্তেজক মুত্রকারক নিয়ামক। চোখের ক্ষত, ঝাপসা দেখা এবং দৃষ্টিহীনতায় পেঁয়াজের রসে অভূতপূর্ব কাজ করে থাকে। কাম শক্তি বৃদ্ধিতে এর ভ‚মিকা অনস্বীকার্য। এতদ্ব্যতীত চামড়ায় কালো দাগ দূর করাসহ ব্যথা বেদনায় এর ব্যবহার প্রণিধানযোগ্য। তবে এর জননন্দিত বড় অবদান হলো ফুড এবং রান্না কালচারে সবজি হিসেবে ব্যবহার। যদিও এটি সবজি; তথাপিও আমাদের দেশে অনেকে পেঁয়াজকে মসল্লার আওতাভুক্ত করে থাকেন। যে ভাবেই বলি না কেন, পেঁয়াজ সুপরিচিত ও প্রিয় সবজি। মানব সভ্যতার ইতিহাসের আদিযুগ থেকেই পেঁয়াজের ব্যবহার শুরু হয়েছে। এ বিশ্বে প্রায় সব অঞ্চলে রান্নায় পেঁয়াজ ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার খাদ্য সংস্কৃতিতে পেঁয়াজ একটি মৌলিক উপকরণ হিসেবে বিবেচিত। এদিকে পেঁয়াজের চাষের দিক দিয়ে উল্লেখ্য যে, প্রথমে বীজ (দানা) বপন করা হয়। তৎপর চারা হলে, তা সাধারণত অন্য জায়গায় রোপন করা হয়ে থাকে। এর হাল্কা লাল শল্কাপত্রাবৃত্ত অংশ মাটির নিচে থাকে এবং সবুজ লম্বা ও সরু পাতা সহ পুস্পদন্ড মাটির উপরে থাকে। আর এর পাতা নরম নলাকৃত। আর পাতা গজানো শেষ হলে যখন পাতা ঈষৎ হলুদ বর্ণ ধারণ করে তখন পেঁয়াজ পরিপক্ক হয়েছে মনে করা হয়ে থাকে। এর সবুজ পাতা সবজি হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। পুষ্পদন্ডের ঠিক মধ্যস্থল হতে কদমফুলের ন্যায় গুচ্ছবদ্ধ ফুল সাদা বর্ণের মতো পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। আর পুষ্পের মধ্যে পরাগায়নের মাধ্যমে কালো কালো দানা (বীজ) সৃষ্টি হয়, যা পরবর্তীতে মাটিতে বোনা হয় এবং এর থেকে চারা জন্মায়, যা ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, পেঁয়াজের আদি নিবাস পশ্চিম এশিয়ায়। আর্যরা এটিকে ভারতবর্ষে নিয়ে আসে। সব ধরনের মাটিতেই কম বেশী পেঁয়াজ জন্মে। এদিকে চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় হলো ইংরেজি ডিসেম্বর হতে জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে। তবে সময় ও অঞ্চল ভেদে পেঁয়াজের চাষ খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। সাধারণত পেঁয়াজ ভারত, চীন, মায়ানমার, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভুটানসহ নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে বেশী জন্মে থাকে। ভারতের মহারাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশী জন্মে। আর বাংলাদেশের পাবনা ও ফরিদপুরে অধিক পেঁয়াজ জন্মে থাকে। আমাদের দেশে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৫ লাখ টন। অথচ স্থানীয়ভাবে উৎপন্ন হয় ২৯ লাখ টন। কিন্তু চাহিদার চেয়ে উৎপন্ন বেশী হলেও প্রক্রিয়াজাত ক্ষতি (ঝুংঃবস খড়ংং) ২৫ শতাংশ। আর তাই পদ্ধতিগত ক্ষতি বাদ দিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ২২ লক্ষ টন। সেহেতু ঘাটতি মিটাতে বছরে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। এদিকে আমদানিকৃত পেঁয়াজের পদ্ধতিগত ক্ষতি হয় ৮ থেকে ১০ শতাংশ। আবার এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমান পেঁয়াজ পচে যায়। চাহিদা অনুযায়ী সবমিলে গড় পরতা ঘাটতি থাকে প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ টন। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত নতুন ভ্যারাইটি হলো বারি পেঁয়াজ-১। এর একেকটি কন্দের ওজন প্রায় ৬০-৮০ গ্রাম। যাহোক, সব জেলায় চাষ হলেও বৃহত্তর ফরিদপুর ও পাবনা জেলা থেকে দেশের সিংহভাগ পেঁয়াজের সরবরাহ হয়ে থাকে। এদিকে বিভিন্ন জেলায় কমবেশি চাষাবাদ সত্ত্বেও পেঁয়াজের বার্ষিক উৎপাদন দেশের চাহিদার তুলনায় বেশ কম। তাই এই চাহিদার মেটাতে প্রতি বছর বিদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমান পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।
দুই) পূর্বেই বলেছি যে, চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। প্রতিবছর চাহিদা অনুযায়ী বড় একটা পরিমান ঘাটতি থাকে বিধায় বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আর এই ঘাটতি পূরণে পাশর্^বর্তী দেশ বিশেষ করে ভারত থেকে প্রায় নব্বই শতাংশ পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। আর এটাই হয়েছে কাল। এ প্রেক্ষাপটে জনৈক মনীষীর কথা মনে পড়ে যায়। তিনি বলেছিলেন, “সব টাকা এক পকেটে রাখতে নেই”। যাহোক, কয়েকদিন লাগাতার বৃষ্টি, ভারতে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি এবং দুর্গাপূজার বন্ধ অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়। এই বিষয়টি কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা বুঝতে পেরে অতিরিক্ত লাভের আশায় সিন্ডিকেট তৈরী করে বসে। এ সূত্র ধরে উল্লেখ্য যে, দেশের শীর্ষ দুটি পাইকারী বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ এবং ঢাকার শ্যামবাজার থেকেই বাড়ানো হযেছে পেঁয়াজের দাম। এটা সত্য যে, পেঁয়াজের ঘাটতি থাকলেও এর মূল্য এত বাড়ার কথা ছিল না। এ প্রেক্ষাপটে নোবেলজয়ী ড. অমর্ত্য সেনের তত্ত¡ অনুযায়ী উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে মজুত না করে সারাদেশে সঠিক ভাবে বন্টিত হলে পেঁয়াজের সরবরাহ কম হলেও এত বাড়ার কথা ছিল না। যাহোক, ঢাকাসহ সারাদেশে পেঁয়াজের মূল্য গ্যালোপিং আকারে হু হু করে বেড়ে যায়। কোথাও কোথাও পেঁয়াজের সংকটও সৃষ্টি হয়। এ প্রেক্ষিতে স্বভাবতই বাণিজ্যনীতির কথা উঠে আসে। উল্লেখ্য যে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঠিক সময়ে আমদানির সিদ্ধান্তে বিলম্ব, ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও সিন্ডিকেট এবং দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় পেঁয়াজের বাজার লাগামহীন হয়ে ওঠার কারণ হিসেবে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এদিকে পেঁয়াজের অতিরিক্ত মূল্যের কারনে ভোক্তারা দিশেহারা হয়ে পড়ে। শহর, বন্দর, গ্রাম ও অফিস পাড়ায় কেবল পেঁয়াজ নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠে। ঢাকায় পেঁয়াজের কেজি কয়েকগুন পর্যন্ত বেড়ে যায়। রাজধানীর বাইরেও পেঁয়াজের বাজার ছিল উল্টাপাল্টা। অধিকাংশ জেলায় পেঁয়াজের মূল্য এতটাই বৃদ্ধি পায় যে, ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে যায়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হলেও তেমন কার্যকর হয় না। অনেক মার্কেট বিশেষজ্ঞরা এই মর্মে অভিমত পোষণ করেন যে, ভারতে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি ও পূজার ছুটির কারণে এই দুঃখজনক সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ সময় সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য বিশেষ কিছু সুবিধাদানের ঘোষণা দেয়। এহেন অবস্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানিকারক ও বড় ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠকের উদ্যোগ নিলেও তেমন কোন ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে কতিপয় ব্যবসায়ী এই মর্মে খোড়া যুক্তি দেখিয়েছে যে, নিত্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য পন্যের দাম বেড়েছে বলে সমান্তরালভাবে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে অবশ্য এর মূল্য নি¤œগামী। কিন্তু যতটা কমার কথা ছিল অতটা কমেনি। তাছাড়া বাড়তি মূল্য বেশ উঠানামা করছে। তবে বাস্তবতা বিবেচনা করে প্রতীয়মান হয় যে, দেশে ফসল উঠলে ডিসেম্বরের শেষে এবং জানুয়ারির প্রথম দিকে দাম কমে আসবে। মজার ব্যাপার হলো যে, কিছু কিছু জায়গায় মজুতকৃত পেঁয়াজের পচন ধরায় সেই পেঁয়াজের খরিদ্দার নেই বিধায় নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে।
তিন) পেঁয়াজের এই অতিরিক্ত মূল্যের বিষয়ে হৈ চৈ বা হা হুতাশ করার কোন কারণ নেই। তরকারিতে পেঁয়াজ ব্যবহার না করলে যে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে তেমন কোন কিছু নয়। কেননা সাধারণত আমরা যে শাকসবজি খেয়ে থাকি, তার মধ্যে পেয়াঁজের গুণাগুণ বিদ্যমান। কিন্তু আমাদের দেশের রান্নাবান্নায় পেঁয়াজ ব্যবহার বলতে গেলে একটি অবিচ্ছেদ্য কালচারের আওতাভুক্ত বিধায় পেঁয়াজবিহীন রান্না আমরা সহজে মানতে চাই না। এটা সত্য যে, বাস্তবমুখী কতগুলো ব্যবস্থা নিলে হয়তো পেঁয়াজ নিয়ে এ ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে না। প্রথমতঃ আমাদের দেশে সঠিক ভাবে পেঁয়াজের উৎপাদন ও চাহিদা নিরূপন করতে হবে। দ্বিতীয়তঃ আমদানিতব্য সময়, আবহাওয়া ও দুর্যোগকে মাথা রেখে সঠিক বাণিজ্যনীতি প্রনয়ণ করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিবেশী বিশেষ একটি দেশকে গুরুত্ব না দিয়ে আমদানির ক্ষেত্রে অন্য দেশকেও বিবেচনায় রাখতে হবে। এ প্রেক্ষাপটে দুঃখের বিষয় হলো যে এ বিশে^র অনেক দেশে মোটেই পেঁয়াজ জন্মে না। অথচ সে সমস্ত দেশে এর দাম বাড়েনি। সত্যি কথা বলতে কি, প্রায় প্রতি বছর এই সময়ে পেঁয়াজের দাম বেড়ে থাকে। উদ্ভুত সময় বিবেচনা করে যদি সমুদ্রগামী জাহাজে আমদানি করা হতো, তাহলে আমাদের দেশে এ অবস্থা হতো না। তাছাড়া এত টাকা ব্যয় করে উড়োজাহাজেও আনার প্রশ্ন উঠতো না। তৃতীয়তঃ ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে এবং সিন্ডিকেট যাতে না করতে পারে, সে ব্যাপারে চোখ কান খোলা রাখতে হবে। চতুর্থতঃ পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ং সর্ম্পূণতা আনতে উচ্চ ফলনশীল পেঁয়াজের চাষ করতে হবে; প্রয়োজনে অধিক জমি পেঁয়াজ চাষের আওতায় আনতে হবে। মনে রাখতে হবে যে পেঁয়াজ চাষের জন্য আহামরি কোন ব্যবস্থার দরকার হয় না। আর পেঁয়াজের উপযোগী মৃত্তিকা বিবেচনা করলে, বলতে গেলে বাংলাদেশের প্রায় অঞ্চলেই পেঁয়াজ চাষ করা সম্ভব। পঞ্চমতঃ রান্না-বান্নায় সর্বসময়েই যে পেঁয়াজ ব্যবহার করতে হবে, সেই মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। কেননা আমাদের দেহের জন্য পেঁয়াজ থেকে যে উপাদান পাই (যেমন- প্রোটিন, শর্করা, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন, ইত্যাদি) তার বিকল্প হিসেবে অন্য শাক-সবজি থেকে পেতে পারি। ইতোমধ্যে বিকল্প হিসেবে কাঁচা পেঁপে, মূলা, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, বাঁধা কপি ব্যবহার শুরু হয়েছে। তাই পরিশেষে বলতে চাই যে এবার এই পেঁয়াজের মূল্য অস্বাভাবিক হলেও এটি একটি নেতিবাচক খন্ড চিত্র মাত্র। তবে প্রায় প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের দিকে পেঁয়াজের মূল্য বেড়ে যায়। এ প্রেক্ষাপটে উল্লেখ্য যে, আগে উত্তরবঙ্গে একটি বিশেষ সময়ে ‘মঙ্গা’ নামে খাদ্য সংকট দেখা দিতো। কিন্তু যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ায় এখন আর হয় না। অবশ্য এক্ষেত্রে বর্তমান সরকার ধন্যবাদ পাওয়ার দাবিদার। যাহোক, মঙ্গা নিসরনের ন্যায় কার্যকরী ব্যবস্থা পেঁয়াজের ব্যাপারেও গ্রহণ করা সমীচীন বলে মনে করি। বর্ণিত সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে আমরা সংশ্লিষ্ট সবাই যদি তৎপর তথা এগিয়ে আসি, তাহলে পেঁয়াজের ঘাটতি তো থাকবেই না, বরং বিদেশে রপ্তানি করার কথা উড়িয়ে দেয়া যায় না। সেহেতু এ নিয়ে অযথা হৈ চৈ না করে, যাতে আগামীতে আর এ ধরনের নাজুক অবস্থার সৃষ্টি না হয়, সেই দিকে মনোনিবেশ করা সমীচীন বলে মনে করি।

সহায়ক সূত্রাদি ঃ
০১। বাংলা পিডিয়া- ৫ম খন্ড (নবা-প্রথা)।
০২। উইকিপিডিয়া।
০৩। দৈনিক ইত্তেফাক- ১০/১১/২০১৯ইং ও ২৮/১১/২০১৯ইং।
০৪। দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন- ১৬/১১/২০১৯ইং
০৫। দৈনিক মানবকণ্ঠ- ২০/১১/২০১৯ইং।
০৬। The Daily Star- 20.11. 2019
০৭। দৈনিক আমাদের সময়- ২৫/১১/২০১৯ইং
০৮। দৈনিক সময়ের আলো- ১২/১০/২০২১ইং
০৯। প্রায় পত্র-পত্রিকা, সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর-২০২১ইং
১০। হাকিমী চিকিৎসা পদ্ধতি লতা-পাতা মশলাপাতি ও ভেষজ উদ্ভিদের গুণাগুণ- হাকীম মুহাম্মদ আজহারুল ইসলাম নোমানী।
১১। অন্যান্য পত্র-পত্রিকা।

* বিশিষ্ট গবেষক, অথর্নীতিবিদ এবং লেখক হিসেবে বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সম্মাননা ও পদকপ্রাপ্ত।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর