১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, দুপুর ১:৪৫
শিরোনাম :
শিরোনাম :
অমর একুশে বইমেলায় মনোয়ার মোকাররমের “আগামী বসন্তে” আজ বঙ্গবন্ধু গবেষক মিল্টন বিশ্বাসের জন্মদিন কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় এপার-ওপার বাংলার লেখকগণ জবিতে ‘মধুসূদন ও বাংলা সাহিত্য’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত দীনেশচন্দ্র সেনের বৃহৎবঙ্গ, বাংলার লোককৃষ্টির যুক্ত সাধনার ঐতিহ্য আলোচনা সভার প্রধান আলোচক মিল্টন বিশ্বাস স্বর্ণপদক পাচ্ছেন কথাসাহিত্যিক নাসরীন জেবিন যারা কবিতা ভালোবাসে তারা স্বচ্ছ মানসিকতার হয় : কবি কামাল চৌধুরী ফাঁসিতলা ক্লাব ও পাঠাগারের কার্যনির্বাহী কমিটির সাথে সাংসদ মনোয়ার হোসেন চৌধুরীর শুভেচ্ছা বিনিময় ফাঁসিতলা ক্লাব ও পাঠাগারের প্রথম কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত ‘‘সাহিত্যে দুই মহামানব : গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু’’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক আলোচনা চক্রটি অনুষ্ঠিত
নোটিশ :
Wellcome to our website...

লেদার জ্যাকেট (বাবা দিবসের ছোটগল্প)

রিপোর্টার
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪৫ অপরাহ্ন

© রেজওয়ান আহমেদ

এক শ্যামবর্ণ, টেকো, ঘর্মাক্ত বাবার কাছে ছেলের আবদার – ব্র্যান্ডের লেদার জ্যাকেট চাই, শীত চলে এলো বলে ৷ আগের সোয়েটারটা এখন আর চলে না৷ বাবার ফোন যখন বাজছিলো তখন তিনি সায়েন্সল্যাব ওভারব্রিজের গোড়ায় সিএনজিওয়ালার সাথে দরকষাকষিতে ব্যস্ত ৷ কিছুক্ষণ আগেই ঢাকা কলেজের বিপরীত পাশের এসিমার্কেটে দরকষাকষি করে এসেছেন ৷ তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়জীবনেও এই মার্কেটটা জীবন্ত ছিল ৷ তখন সবে টানাপাখার যুগ বাসি হয়ে ইলেকট্রিক পাখার প্রচলন হয়েছে ৷ কালো গোলাকার সুইচ, কাঠের সুইচ বোর্ডের ওপর ৷ এখনকার মতো প্লাস্টিকের বহুল প্রচলন তখন ছিল না ৷ দেশি পণ্যের বাজার এখন ত চীনের দখলে চলে গেছে ৷ হয়তো ছেলেটার জন্য চায়নিজ মেম খুঁজতে হবে সময় হলে ৷ আর মেয়ে ত কোরিয়ান সিরিয়ালের পাগল ৷ ওরকমই কোনো এক চোখছোট ছোকরার গলায় ঝুলবে ভাবছে হয়তো সদ্যকেনা এলইডি টিভির সামনে বসা মেয়েটা ৷ আর হাবিব সাহেব এসব ভাবছিলেন নূরজাহান মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে পান চিবুতে চিবুতে ৷ এখন অবশ্য তিনি সিএনজিতে বসে আছেন ৷ ব্রয়লার মুরগির খোপে দেশি মোরগ ৷ দরদর করে ঘামছেন ৷ আচ্ছা, সিএনজিতে কি এরা এসি লাগাতে পারবে কোনোদিন ? লাগালে সেটা কতটুকু হবে সাইজে ? ফোর আর সাইজের ফটো যতটুকু, ততটুকু ? মনে হয় ৷

আজকের রাস্তায় গাড়িঘোড়া কম ৷ মঙ্গলবারে এইদিককার মার্কেটগুলো বন্ধ থাকে ৷ আজ তো মঙ্গলবার না, অমঙ্গলবারও না নিশ্চয়ই ৷ মানুষজনের ভীড়ভাট্টা কম ৷ ভালোই হলো বেশি ঘামলে আবার জ্বর আসবে কাল ৷ অফিস করতে হবে ৷ চারদিনের ছুটি পঞ্চমদিনে নেয়ার বিলাসিতা দেখানোর নীতি হাবিবুর রহমানের না ৷ তার যা বেতন তার দশ কেন? একশগুণ টাকায়ও এই নীতি বিক্রি করবেন না তিনি ৷ সম্মানটা সবার আগে ৷ সমাজে দশজনের সাথে চলতে হয়, তাই নিজের অনেক সাধ আহ্লাদ সচেতনভাবেই একপাশে জমা করে রাখেন ৷ বাকি থাকে স্ত্রীসন্তান ৷ তাদের খুশি রাখতেই জীবন শেষ করতে চান ৷ অদ্ভুত চিড়িয়া ৷

লঞ্চের ডাল চচ্চড়িটা আসলেই অমৃত ৷ এদের জন্য হলেও একবার সুইজারল্যান্ডে যাওয়া দরকার বরিশালবাসীর প্রতিনিধি হয়ে ৷ তাহলে নোবেল প্রাইজের নতুন ক্যাটাগরি খোলার বন্দোবস্ত হয়ে যেত ৷ হাবিব সাহেবের কেন জানি মনে হচ্ছে ওনার কথা ইউরোপবাসীরা ফেলবে না ৷ লঞ্চেচড়া মানুষগুলো আশ্চর্যরকমের কনভিন্সিং পাওয়ারের ব্যাংক ধারণ করে বুকপকেটের আড়ালে ৷

– ছার, দুয়ার খোলেন, লঞ্চ ঘাডে ভেরচে ৷

– আসছি ৷ কী ব্যাপার ?

– নামবেন না ?

– চইল্লা আসছে ?

– হয় ৷

– আমার বোঝাডা এট্টু নামাইয়া দ্যাও ৷ অ্যাত্তোবড় প্যাকেট নিয়া মছিব্বাতে পড়ছি ৷

– আচ্ছা, সমেস্যা নাই ছার ৷ দেতে আছি ৷

(বাসায় পৌঁছে)

– ছেলে কই ?

– দুমকি ৷ সকালের বাসে গেছে ৷ দুপুরে আইসা পড়বে লোকাল বাসে ৷

– আমি অফিসে যাবো ৷ খাবার রেডি করো ৷ মিটিং আছে ৷ দশটার মইধ্যে থাকা লাগবে ৷ গোসল কইরা আসি ৷

– রেস্ট নেবা না ?

– রেস্ট  ? লঞ্চে সারারাত রেস্ট নিছি ৷ আর না ৷ টাকাডা আয় কোন জাগা দিয়া ? আমার দুইআত চলে না জানো না ?

– আচ্ছা  খাবার দেতে আছি ৷ আও তুমি গোসল সাইরা ৷

হঠাৎ ফোনটা বেজে ওঠে হাবিব সাহেবের ৷

– তোমরা খালি কাজের সময়ই ফোন দ্যাও ৷ কী হইছে বলো তাড়াতাড়ি ৷

– তোমারে ব্র্যান্ডের লেদার জ্যাকেট আনতে কইছি ৷ তুমি এডা কী আনছো লোকাল ? তুমি পইরো এডা ৷ আমি আগেরডাই পরমু ৷

– হ্যাঁ ? (মুখের ওপর ফোন রেখে দেয় ছেলেটা) ৷

হাবিব সাহেব কনফারেন্স রুমে ঢুকতে যেয়ে হঠাৎ চৌকাঠে পা আটকে মুখ থুবড়ে পড়েন ৷ সবাই মিটিং ফেলে ছুটে এসে তাকে ধরে তোলার চেষ্টা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয় ৷ এ ব্যর্থতা সবার নয়, তাঁর একার, যা আর কোথাও নেই । ছেলের জেদের কাছে নিজেকে কখনো কখনো শিশুরও শিশু হয়ে যান তিনি । সারাজীবনের এ  ব্যর্থতাটা একবাক্যে প্রকাশ করে দেয় অবুঝ ছেলে – আমি আগেরডাই পরমু ৷

ইউরোপবাসীরা কথা শুনবে কী করে ? মধ্যবিত্ত হাবিব সাহেবদের যে মাঝেমধ্যে মুখ থুবড়ে পড়াটাই নিয়ম ৷

হেলথ এইড থেকে ফোন আসে ছেলেটার কাছে ৷ জরুরি অনেকগুলো নাম্বার ব্যাকআপ করে রেখেছিলেন হাবিব সাহেব ছেলের মোবাইলেই ৷ স্পষ্ট মনে পড়ে ছেলের – সেদিন হোহো করে হেসে বলেছিলো – আব্বা তুমি পারোও ৷ হাসপাতালে কোনোদিন যাওয়া লাগছে আমাগো ? না লাগবে কহনো ? খালি খালি সেটের মেমোরি নষ্ট করতে লাগজো ৷ ধুর !

সেদিনের সেই ধুরের জবাব আজ যেন রিংটোন হয়ে বাজছে ছেলেটার ফোনে৷ অপারেশন থিয়েটারের বন্ধ দরজার বাইরে থেকে ফোনটা করেছিলেন হাবিব সাহেবের কলিগ ৷

কী এমন কথা হয়েছিলো তখন যে একছুটে ছেলেটা ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লো লাইন কাটতে না কাটতে ? বাবার টানেই কি তার এমনতরো পরিবর্তন ? অপারেশন থিয়েটারের সামনের জটলাটা ঠিক কী বোঝাতে চাইছে ? অপারেশন টেবিলেই বা কী ঘটেছিলো ? অথবা হাবিব সাহেবের ভাগ্যে ?

আমরা এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর পাইনা ৷ তবে আমরা জানি হাবিব সাহেবরা সন্তানের এমন পরিবর্তন না দেখে যেতে পারেন না ৷ অবশেষে সুখে-শান্তিতে থাকতে পারার অযোগ্য পিতা পৃথিবীতে একটিও নেই ৷

(গল্পকার – শিক্ষার্থী, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর