১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার, সন্ধ্যা ৭:২৭
শিরোনাম :
শিরোনাম :
অমর একুশে বইমেলায় মনোয়ার মোকাররমের “আগামী বসন্তে” আজ বঙ্গবন্ধু গবেষক মিল্টন বিশ্বাসের জন্মদিন কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় এপার-ওপার বাংলার লেখকগণ জবিতে ‘মধুসূদন ও বাংলা সাহিত্য’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত দীনেশচন্দ্র সেনের বৃহৎবঙ্গ, বাংলার লোককৃষ্টির যুক্ত সাধনার ঐতিহ্য আলোচনা সভার প্রধান আলোচক মিল্টন বিশ্বাস স্বর্ণপদক পাচ্ছেন কথাসাহিত্যিক নাসরীন জেবিন যারা কবিতা ভালোবাসে তারা স্বচ্ছ মানসিকতার হয় : কবি কামাল চৌধুরী ফাঁসিতলা ক্লাব ও পাঠাগারের কার্যনির্বাহী কমিটির সাথে সাংসদ মনোয়ার হোসেন চৌধুরীর শুভেচ্ছা বিনিময় ফাঁসিতলা ক্লাব ও পাঠাগারের প্রথম কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত ‘‘সাহিত্যে দুই মহামানব : গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু’’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক আলোচনা চক্রটি অনুষ্ঠিত
নোটিশ :
Wellcome to our website...

শিক্ষা ও সংলাপেই শান্তি

রিপোর্টার
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২৭ অপরাহ্ন

আলো ডি’রোজারিও                                       

১। মানুষ হিসেবে প্রধান দু’টি কাজ: স্রষ্টার আরাধনা যা আমরা নিজ নিজ ধর্মপালনের মাধ্যমে করছি। আর দ্বিতীয় কাজটি হ’ল, সৃষ্টির সেবা করা। আমরা তা নিজ নিজ কাজকর্ম ও পেশার মাধ্যমে করছি।

শিক্ষকগণ তাদের শিক্ষাসেবা দিচ্ছেন, সমাজকর্মীগণ সমাজসেবা দিচ্ছেন, কৃষকসমাজ দিচ্ছেন কৃষিসেবা, এভাবে তালিকা আরো বড় করা যাবে। এখানে উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক যে সম্মানিত শিক্ষকগণ আমাদের প্রকৃত মানুষ হতে একাধিকভাবে সহায়তা করছেন। তারা বুদ্ধিবৃত্তিক গঠন দিতে জ্ঞানের বহর বাড়িয়ে তুলছেন, সেসাথে মানবিক গঠন দিতে হৃদয়বৃত্তিক শিক্ষাও দিচ্ছেন। সহনশীল হওয়া, সহমর্মী হওয়া, পরোপকারী হওয়া, অন্যের দুঃখে দুঃখী হওয়া, শান্তিস্থাপন করা, সহভাগিতা করা, কারো বিপদে এগিয়ে যাওয়া, ইত্যাদি হৃদয়ভিত্তিক গঠনেরই অংশ। আর এই হৃদয়ভিত্তিক গঠন সহায়ক হয় মানবিক হয়ে গড়ে উঠার ক্ষেত্রে। যে যত মানবিক হয়, সে হয় তত সংলাপী। আর যারা হয় সংলাপী, তারাই তো হতে পারে শান্তি স্থাপনকারী।

২। একজন মানবিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে গড়ে ওঠা ব্যক্তির অন্যতম কাজ হলো ধমীঁয় মূল্যবোধের বিস্তার করা এবং সেসাথে সমাজে ভালো উদাহরণ স্থাপন করার মাধ্যমে ’লবণ’ ও ’আলো’ হতে নিরন্তর চেষ্টা অব্যাহত রাখা। সামান্য পরিমাণে লবণ ব্যবহারে খাবার সুস্বাদু হয়ে যায়, আর ছোট একটি মোমবাতির আলো পারে পুরো ঘর আলোময় করতে। ধমীঁয় মূল্যবোধে বিশ্বাস স্থাপন করা একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিশ্বাস স্থাপন করা ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে ও অনুসরণে জীবন-যাপন করা। সমতা, সততা, ন্যায্যতা, ভালোবাসা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও শান্তির প্রয়োজনীয়তার কথা যেমন বলতে হবে, তেমনি নিজেকে হতে হবে সৎ, ন্যায়বান, নিরপেক্ষ, অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, শান্তিস্থাপনকারী, অন্যের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় যত্নশীল। একজন ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তি সহনশীল ও সংলাপী হবেন, এই আশা করা যেতেই পারে। মূল্যবোধ ও নীতিবোধ রেললাইনের মতোই সমান্তরাল ভাবে চলে। মূল্যবোধ সম্পন্ন ব্যক্তির নীতিবোধে স্পষ্টভাবে উদ্ভাসিত হয় অপরকে উপকার করার তীব্র অনুভূতিতে, অন্যায্য বিষয়কে পরিহার করার প্রচণ্ড ইচ্ছা শক্তিতে ও অসুন্দরকে পাশ কাটাবার অকাট্য যুক্তিতে। একজন মূল্যবোধ সম্পন্ন ব্যক্তি তার চারিত্রিক শুদ্ধতা, সাধুতা ও সত্যশীলতা দিয়ে আলোর মশাল জ্বালিয়ে সমাজকে শান্তির পথে এগিয়ে নিতে পারেন।

৩। শিশুর সমাজীকরণ বা সমাজ প্রত্যাশিত আচরণে শিক্ষা ও অভ্যাস গঠনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখেন বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যরা, খেলার সাথী ও স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ। বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যগণ শিশুকে একটি চমৎকার পরিবেশ দিতে পারেন যা ভয়হীন সংলাপের। ভয়হীন সংলাপ শিশুর মানসিক ও শারীরিক গঠনের অত্যন্ত সহায়ক। ভয়হীন সংলাপ শিশুর মনে এই আশা দেয় যে, তাকে শুনতে, বুঝতে, ও সাহায্য করতে তার আশেপাশে অনেকে আছেন। যে শিশুরা বাবা-মা বিহীন এবং সেই কারণে অন্য কোন পরিবারে বা প্রতিষ্ঠানে কারো যত্নে বেড়ে উঠে, তারাও ভয়হীন সংলাপের সুযোগ পেলে সত্যিকারের সৃজনশীল, সংলাপী ও শান্তিপ্রেমী মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে পারে। একথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, যারা আশাবাদী তারাই সংলাপী। আর যারা সংলাপী তারাই শান্তিকামী। যারা সংলাপী তারাই শান্তি গড়তে আগ্রহী। ধর্মে যারা প্রকৃত বিশ্বাসী তারাই আশাবাদী। কারণ ধর্মে নিরাশার কোন স্থান নেই। সংলাপ শান্তি স্থাপনের পূর্বশর্ত ও মাধ্যম। শান্তি হলো ভালোবাসার ফল, আর ভালোবাসা হলো ন্যায্যতার ভিত্তি। ভালোবাসা ছাড়া ন্যায্যতা আশা করা যায় না। ভালোবাসা ছাড়া শান্তিও আশা করা যায় না। আবার ভালোবাসা কী করেই বা সম্ভব সংলাপ ছাড়া! ভালোবাসা, সংলাপ, ন্যায্যতা ও শান্তি পরস্পর ভাইবোন, তারা যে একই পরিবারের সদস্য!

৪। গভীর মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবো, যেকোন ঘটনা দুইবার ঘটে। প্রথমবারে ঘটে মনে, আর দ্বিতীয়বারে বাস্তবে। শান্তির ঘটনাই বলি, আর অশান্তির ঘটনাই বলি, ঘটনাকারী প্রথমে মনে মনে চিন্তা করে বা ছক কেটে স্থির করে কীভাবে ঘটনাটি ঘটাবে, পরে তা বাস্তবে ঘটায়। আমি একজনের উপকার করব, কীভাবে তা করব,  মনে মনে সেটা স্থির করি, তারপরে উপকার করতে উদ্যোগ নেই অর্থাৎ প্রকৃত ঘটনা ঘটাই। কারো উপকার করতে পারলে, আমার মনে এক ধরনের শান্তি আসে। অন্যদিকে, কারো অপকার করতে চাইলে তা-ও মনে মনে প্রথমে ঠিক করে নেই, অতপর তা বাস্তবায়ন করি। কারো অপকার করলে আমার মনে অশান্তি বাড়ে, যদিও অপকার করবার আগে ভাবা হয়, কারো অপকার করলে শান্তি পাবো। এই ভাবনা যে ভুল তা বুঝতে পারা যায় অপকার করার পর। আমি যার অপকার করি, সে-ও কিন্তু অশান্তিতে পরে। তাহলে ফল কী দাঁড়াল? আমার মনের অশান্তি আমাকে প্ররোচিত করে অন্যের অপকার করতে, আর আমি অপকার করার পর আমারও অশান্তি, যার অপকার করলাম তারও অশান্তি। এই অশান্তির শুরু কোথায়? মনে। তাই, মনে শান্তি রাখা খুবই দরকার। মনে শান্তি রাখা যায় কীভাবে? অর্থবহ সংলাপ করে। যে পরিবার তাদের সদস্যদের নিয়ে একসাথে বসে সংলাপ করে, তারা শান্তির বীজ বোনে। অনেকটা পরিবারের সকলে মিলে একত্রে প্রার্থনা করার মতো। বলা হয়ে থাকে, যে পরিবার একত্রে প্রার্থনা করে, তারা একত্রে থাকে। সেই সুর ধরে বলা যায়, যারা নিয়মিত সংলাপ করে, তারা শান্তিতে থাকে।

৫। ইতোমধ্যে উপরে লিখেছি, সংলাপ শান্তিস্থাপনের পূর্বশর্ত। এটা ব্যক্তিতে ও ব্যক্তিতে, পরিবার থেকে পরিবারে, সমাজ হতে সমাজে, সর্বত্রই অভিন্ন। তাই ব্যক্তির মন ও গঠন, পরিবারে সম্পর্ক ও সংলাপ, সমাজের শান্তিস্থাপনে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারে ও সমাজে শান্তিস্থাপন কিছুটা কঠিন হলেও, খুবই সম্ভব। ছোট ছোট পদক্ষেপ, যথেষ্ট সাহস ও দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে নিতে পারাটাই আসল কথা। সত্যে ও বিশ্বাসে অটল থাকাটাই মূল বিষয়। শান্তিস্থাপনে একে অপরকে পাঠ করতে হয়, একে অপরের দিকে তাকাতে হয়, অন্যের প্রতি মনোযোগী হতে হয়, অন্যের কথা- যা দুঃখের বা সুখের তা শুনতে হয়। অশান্তি কখন হয়? যখন আমরা একে অপরকে পাঠ করি না, অন্যের দিকে তাকাই না, মনোযোগ সহকারে অন্যের কথা শুনি না, ঠিক তখনই। আমরা আমাদের জীবনে অনেক সময়ই অশান্তির মধ্যে থাকি আর শান্তি খুঁজি, সত্যি কী না? আমাদের এটা বুঝতে হবে, সত্যিকারের শান্তি নিজের মনের ওপর, নিজের ত্যাগের ওপর, নিজের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার ওপর, নিজ পরিবারের ওপরই নির্ভর করে। তাই নিজের সাথে, অন্যান্যদের সাথে, সর্বোপরি ঈম্বরের সাথে সংলাপ করেই না আসবে মনের শান্তি। শান্তিস্থাপনে সংলাপ চালাতে হয় অবিরত, দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস, তারপরে বছর গড়ায়, চলতে থাকে জীবন অবধি। এটি একটি নিরন্তর প্রক্রিয়া, মতামত গঠন ও পরিবর্তনের প্রক্রিয়া, ধীর ও সংযত, কিন্তু লক্ষ্যে স্থির। নীরবে, সরবে ও সংলাপে চলে এই প্রক্রিয়া, কোন প্রকার শক্তিপ্রয়োগ চলে না, ভয়-ভীতি কোন কাজে আসে না, চলে বুঝতে পারার পর্যায়- মন বুঝতে পারা, যুক্তি বুঝতে পারা, অন্যকে বোঝানো অনেকটা সময়-সাপেক্ষ বৈকি। এই প্রক্রিয়ায় মনে রাখা অত্যন্ত জরুরি যে, অন্ধকার পারে না অন্ধকারকে দূর করতে, অন্ধকার দূর করতে লাগে আলো। আর আমরা আলো পাই কীভাবে? সত্যে ও সংলাপে, বিশ্বাসে ও ভালোবাসায়, ন্যায্যতায় ও ব্যক্তি-মর্যাদায়। পরিবারে ও সমাজে শিক্ষায় ও সংলাপেই চলমান এই প্রক্রিয়া, যার ফলাফল শান্তি আর শান্তি। আসুন- পরিবারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও সমাজে সত্য-নির্ভর প্রকৃত সংলাপের মাধ্যমে শান্তিস্থাপনে আমরা আরো একটু বেশি যত্নবান হই।

(আলো ডি’রোজারিও, প্রেসিডেন্ট, এশিয়া কারিতাস, সাবেক নির্বাহী পরিচালক, কারিতাস বাংলাদেশ)                                          


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর