১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার, সন্ধ্যা ৭:২৭
শিরোনাম :
শিরোনাম :
অমর একুশে বইমেলায় মনোয়ার মোকাররমের “আগামী বসন্তে” আজ বঙ্গবন্ধু গবেষক মিল্টন বিশ্বাসের জন্মদিন কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় এপার-ওপার বাংলার লেখকগণ জবিতে ‘মধুসূদন ও বাংলা সাহিত্য’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত দীনেশচন্দ্র সেনের বৃহৎবঙ্গ, বাংলার লোককৃষ্টির যুক্ত সাধনার ঐতিহ্য আলোচনা সভার প্রধান আলোচক মিল্টন বিশ্বাস স্বর্ণপদক পাচ্ছেন কথাসাহিত্যিক নাসরীন জেবিন যারা কবিতা ভালোবাসে তারা স্বচ্ছ মানসিকতার হয় : কবি কামাল চৌধুরী ফাঁসিতলা ক্লাব ও পাঠাগারের কার্যনির্বাহী কমিটির সাথে সাংসদ মনোয়ার হোসেন চৌধুরীর শুভেচ্ছা বিনিময় ফাঁসিতলা ক্লাব ও পাঠাগারের প্রথম কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত ‘‘সাহিত্যে দুই মহামানব : গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু’’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক আলোচনা চক্রটি অনুষ্ঠিত
নোটিশ :
Wellcome to our website...

১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড : দু’বছর আগেই বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করেছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো

রিপোর্টার
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২৭ অপরাহ্ন

ভার্সিটি ডেস্ক

বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে ২ বছর আগেই সতর্ক করেছিলেম কিউবার অবিসংবাদিত বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো। ১৯৭৩ সালে আফ্রিকার আলজিয়ার্স নগরীতে জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনের শেষপর্যায়ে এই দুই মহান নেতার সৌজন্য সাক্ষাতের সময় নতুন সরকার গঠনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।

ওই সময় বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক ও বিশিষ্ট সাংবাদিক এম আর আখতার মুকুল সেই সাক্ষাতের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তার ‘মুজিবের রক্ত লাল’ বইতে মুজিব-কাস্ত্রোর কথোপকথন তুলে ধরেন।‌ নিম্নে কথোপকথনটি হুবহু তুলে ধরা হলো-   

কাস্ত্রো : এক্সেলেন্সি, আপনি বোধ হয় চিলির বিপ্লবী প্রেসিডেন্ট আলেন্দের সর্বশেষ অবস্থার কথা অবগত আছেন। বিদেশি ষড়যন্ত্রে তার সরকারের পতন এখন যেকোনো মুহূর্তে হতে পারে। এর অর্থ হচ্ছে, এই মহান বক্তিত্বকে ধরাধাম থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে। এক্সেলেন্সি, এ ধরনের এক প্রেক্ষাপটে আপনাকে অত্যন্ত আপনজন মনে করেই আজ কয়েকটি কথা বলব। এজন্য আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। 

মুজিব : এক্সেলেন্সি, আপনি নির্ভয়ে এবং সরল মনেই কথা বলতে পারেন। আমি জানি যে, আপনি হচ্ছেন আমাদের অকৃত্রিম শুভাকাঙ্ক্ষী এবং বন্ধু। 

কাস্ত্রো : বাংলাদেশ এবং ভারত থেকে আমরা যেসব খবর পাচ্ছি, তাতে এই দুটো দেশের অবস্থা খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছে না। দুটো দেশেই সাম্রাজ্যবাদী এজেন্টরা খুবই তৎপর। 

মুজিব : এক্সেলেন্সি, এত ভূমিকা না করে আসল কথা বললে আমি খুশিই হব। বেয়াদবি নেব না। 

কাস্ত্রো : এক্সেলেন্সি, তাহলে শুনুন। চিলির প্রেসিডেন্ট আলেন্দের মতো আমরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মুজিবকেও খরচের খাতায় রেখে দিয়েছি। ইউ আর ফিনিশ এক্সেলেন্সি (আপনিও শেষ এক্সেলেন্সি)।

মুজিব : কমরেড, হঠাৎ করে এ ধরনের কথাবার্তা বলছেন কেন? একটু গুছিয়ে বলবেন কি? 

কাস্ত্রো : বিকজ, ইউ হ্যাভ লিগালাইজড দ্য ডিফিটেড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইন বাংলাদেশ। ইউ আর ফিনিশ এক্সেলেন্সি। (কেননা, আপনি বাংলাদেশে একটা পরাজিত প্রশাসনকে আইনসঙ্গত করেছেন। এক্সেলেন্সি, আপনি কিন্তু নিশ্চিহ্ন হতে যাচ্ছেন।)

মুজিব : এক্সেলেন্সি, আপনি জানেন যে, আমাদের বাংলাদেশ আয়তনে একটি ক্ষুদ্র দেশ এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। আমাদের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ঝানু ‘ব্যুরোক্রেট’দের প্রয়োজন। এজন্যই আমি পাকিস্তানি আমলের অভিজ্ঞ অফিসারদের চাকরির ধারাবাহিকতা দিয়ে বাংলাদেশের প্রশাসনে বসিয়েছি। 

কাস্ত্রো : বেয়াদবি নেবেন না এক্সেলেন্সি। এদের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার কথা বলছেন? ফুঃ? হোয়াট এক্সপিরিয়েন্স দে হ্যাভ গট? উইথ দেয়ার এক্সপিরিয়েন্স অ্যান্ড অ্যাডভাইস মাইটি পাকিস্তান লস্ট ইন দ্য ওয়ার। ইয়োর মুক্তি বয়েজ? নো এক্সপিরিয়েন্স। ফাইটিং, ফাইটিং অ্যান্ড ফাইটিং, গট ভিকটরি। (ফুঃ এদের কী অভিজ্ঞতা রয়েছে ? এসব অভিজ্ঞতা এবং পরামর্শের জন্যই তো যুদ্ধে মহাপরাক্রমশালী পাকিস্তানের পরাজয় হয়েছে। আপনার মুক্তিবাহিনীর ছেলেরা? কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। লড়াই, লড়াই আর লড়াই, বিজয়কে এরা ছিনিয়ে আনল)।

ছবি: ফিডেল কাস্ত্রো

মুজিব : তাহলে আমরা যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে পুনর্গঠনের কাজ করব কীভাবে? 

কাস্ত্রো : ব্রিং লইয়ার্স, ব্রিং জার্নালিস্টস, ব্রিং বিজনেস এক্সিকিউটিভস, ব্রিং ডক্টরস, ব্রিং ইঞ্জিনিয়ার্স, ব্রিং প্রোফেসার্স অ্যান্ড পুট দেম অন টপ অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। দে উইল ডু মিসটেক, মিসটেক অ্যান্ড লার্ন- বাট নট কন্সপিরেসি। ফর গড সেক। প্লিজ গিভ মোর রেসপন্সিবিলিটি টু ইয়োর মুক্তি বয়েজ অ্যান্ড ফুললি ট্রাস্ট দেম। আদারওয়াইজ, ইউ আর ফিনিশ এক্সেলেন্সি। (আইনজীবী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষাবিদ— এসব পেশার নেতৃস্থানীয়দের এনে সরকারি প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে দিন। এরা ভুলের পর ভুল করে সঠিক শিক্ষা লাভ করবে, কিন্তু এরা ষড়যন্ত্র করবে না। পরম করুণাময়ের দোহাই দিয়ে বলছি, আপনার মুক্তিযোদ্ধা ছেলেদের আরও বেশি করে দায়িত্ব দিন এবং সম্পূর্ণভাবে ওদের বিশ্বাস করুন। অন্যথায় আপনি কিন্তু নিশ্চিহ্ন হতে যাচ্ছেন এক্সেলেন্সি।) 

মুজিব : কমরেড সত্যি কথা বলতে কি, গুটি কয়েক আঙ্গুলে গোনা কোলাবরেটর অফিসার ডিসমিস করে বাকি অভিজ্ঞ অফিসারদের সিনিয়রিটি দিয়ে আমি দায়িত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছি। আমার তো এতদিনের ধারণা যে, এদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে। কিন্তু আপনার কথাবার্তায় আমি বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লাম। 

কাস্ত্রো : এক্সেলেন্সি, দুনিয়ার কোথাও যুদ্ধে পরাজিত প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নতুন প্রশাসনে আর দায়িত্ব দেওয়া হয় না। বাংলাদেশে আপনার মহানুভবতায় ওরা প্রাণে রক্ষা পেয়েছে এই-ই তো যথেষ্ট, যুদ্ধোত্তর দেশে তো এ ধরনের অফিসার পুনর্বাসনের প্রশ্নই উঠতে পারে না। দেখুন না, সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের পরাজয় হলে, মার্কিন প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মচারী এমনকি রাষ্ট্রদূতদের পর্যন্ত বিদায় নিতে হয়।\

মুজিব : এক্সেলেন্সি প্রেসিডেন্ট কাস্ত্রো, আমার তো এখন একমাত্র চিন্তা যে, বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে কীভাবে দ্রুত পুনর্গঠন করা সম্ভব।

কাস্ত্রো : এক্সেলেন্সি, তাহলে কিউবার দৃষ্টান্ত দিয়েই বলছি। মহান বিপ্লবের অব্যবহিত পর কমরেড চে গুয়েভারা স্বয়ং কিউবার পরাজিত প্রশাসনকে নিশ্চিহ্ন করে একেবারে নতুন করে ঢেলে সাজিয়ে দিয়েছেন। আজকের দিনে কিউবার মাটিতে অন্তত প্রাক্তন বাতিস্তা সরকারের কোনো ব্যুরোক্রেটের চিহ্নমাত্র খুঁজে পাবেন না। এজন্যই কিউবার ঘাড়ের ওপরে মহাপরাক্রমশালী মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অবস্থান হওয়া সত্ত্বেও আমার বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হচ্ছে না। পশ্চিম গোলার্ধের মানচিত্রের দিকে তাকিয়ে দেখুন এক্সেলেন্সি। যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামি বিচ থেকে কিউবার দূরত্ব মাত্র ৯০ মাইলের মতো। অথচ কিউবা সগর্বে তার অস্তিত্ব বজায় রেখেছে। কমরেড এই যে দেখছেন, আমার দেহরক্ষীদের। এদের কাউকে আমার বিরুদ্ধে দলে ভেড়াতে পারবে না, কোনো দামেই এদের কেনা সম্ভব নয়। 

মুজিব : এক্সেলেন্সি আপনি দয়া করে থামবেন না। আপনার কাছ থেকে আরও শুনতে চাই। ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আমার জ্ঞানচক্ষুর উন্মিলন হচ্ছে। 

কাস্ত্রো : (অদূরে দণ্ডায়মান দেহরক্ষীদের প্রতি অঙ্গুলিনির্দেশ করে বললেন) প্লিজ ট্রাই টু বাই দেম। অফার দেম হানড্রেড থাউজেন্ড ডলার-হানড্রেড থাউজেন্ড- হাফ এ মিলিয়ন। অল রাইট, অফার দেম ওয়ান মিলিয়ন ডলার, নো ইউ কান্ট বাই দেম। ডিউরিং লং ওয়ার অ্যাগেইনস্ট ডিকটেটর বাতিস্তা, উই ফট টুগেদার ফ্রম দ্য সেম ব্যাংকার। উই শেয়ার ফুড-বেড অ্যান্ড এভরিথিং। ইউ কান্ট ইমাজিন হাউ মাচ দে লাভ মি। আই স্মোক সিগার। মাই বয়েজ টেস্ট ইট ফার্স্ট। টু অব দেম ডায়েড। বিকজ, সিআইএ পয়জনিং। এক্সেলেন্সি ইন বাংলাদেশ হুম আর ইউ ট্রাস্টিং? লাইক কমরেড আলেন্দে, ইউ আর অলসো গোয়িং টু বি ফিনিশ কমরেড মুজিব।

(দয়া করে এদের কেনার চেষ্টা করুন। এদের অফার করুন এক লাখ ডলার-দুই লাখ-অর্ধ মিলিয়ন ডলার। আচ্ছা ঠিক আছে, এদের এক মিলিয়ন ডলার অফার করুন। না, আপনি কিছুতেই এদের কিনতে পারবেন না। ডিকটেটর বাতিস্তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের সময় আমরা একই ব্যাংকারে থেকে যুদ্ধ করেছি। এ সময় আমরা খাওয়া-দাওয়া, বিছানা-সবকিছু একই সঙ্গে ভাগ করেছি। আপনি ধারণাও করতে পারবেন না এরা আমাকে কী পরিমাণ ভালোবাসে। আমার চুরুট খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। তাই আমার ছেলেরা প্রথমেই প্রতিটি প্যাকেট থেকে চুরুট টেস্ট করে দেখে। দুজন তো মরেই গেল। কারণ, সিআইএর এজেন্টরা বিষ মিশিয়েছিল। এক্সেলেন্সি, বাংলাদেশে আপনি কাদের বিশ্বাস করেছেন? কমরেড আলেন্দের মতো আপনিও নিশ্চিহ্ন হতে যাচ্ছেন কমরেড মুজিব।) 

সবার চোখ তখন অশ্রুসজল। এবার বিদায়ের পালা। হাতের অর্ধদগ্ধ চুরুটটা অ্যাশট্রেতে রেখে ধীর পদক্ষেপে ফিদেল কাস্ত্রো এগিয়ে এলেন বঙ্গবন্ধুর কাছে। এরপর কাস্ত্রো-মুজিব উষ্ণ আলিঙ্গন আর পরস্পর চুম্বন। আলিঙ্গনের শেষ মুহূর্তে মুজিবের কাঁধে মাথা রেখে অকস্মাৎ ঘরের নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে কাস্ত্রো বলে উঠলেন, ‘কমরেড মুজিব, আই লাভ ইউ-আই লাভ ইউ। আই লাভ বাংলাদেশ। (কমরেড মুজিব, আমি তোমায় ভালোবাসি-আমি তোমায় ভালোবাসি। আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি।)’ 

বারান্দায় স্টার্ট দিয়ে রাখা বিরাট লিমোজিনে উঠতে গিয়ে হঠাৎ মাথাটা একটু তেরছা (বাঁকা) করে ঘুরিয়ে কাস্ত্রো চিৎকার করে স্লোগান দিলেন, ‘জয় বাংলা’। 

ভার্সিটি নিউজ/


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর